১৪ ডিসেম্বর : বুদ্ধিজীবী দিবসে এক রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবানের স্মরণ
ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে জনাব কবির মুরাদ সাহেব
আজ ১৪ ডিসেম্বর—শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে দিনটি যেমন গভীর বেদনাবিধুর, তেমনি গৌরবোজ্জ্বল। ঠিক ছয় বছর আগে এই তাৎপর্যপূর্ণ সময়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এক গুণী মানুষ, আদর্শবান রাজনীতিক, লেখক ও সমাজসেবক—জনাব কবির মুরাদ সাহেব এর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী।
জনাব কবির মুরাদ সাহেবের গ্রামের বাড়ি ছিল মাগুরা জেলার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পারনান্দুয়ালী গ্রামে। শিকড়ের প্রতি গভীর টান ও এলাকার মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তিনি ছিলেন সততা, নিষ্ঠা ও বহুমাত্রিক গুণে সমৃদ্ধ এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ছাত্রজীবনের শেষ অধ্যায় সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবনেই তাঁর চিন্তা-চেতনায় রাজনীতি ও দেশভাবনার বীজ রোপিত হয়। একই সময় গড়ে ওঠে বই লেখার অভ্যাস, যা পরবর্তীতে তাঁকে একজন লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। পাশাপাশি অভিনয় ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিল তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর জীবনের প্রথম অধ্যায়।
পরবর্তী সময়ে তিনি যোগ দেন এটলাস শিপিং কোম্পানিতে। চাকরিজীবনে অল্প সময়ের মধ্যেই দক্ষতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখে দ্রুত উন্নতি লাভ করেন। পারিবারিক জীবনে স্বচ্ছলতা অর্জন তাঁর জন্য কঠিন ছিল না। তবে তিনি কখনোই ব্যক্তিগত সাফল্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল—
“জীবন একটাই, মানুষের জন্য কিছু না করে গেলে সেই জীবনের কোনো মূল্য নেই।”
এই দর্শনকে ধারণ করেই তিনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদন করেন রাজনীতির পথে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি শুরু করেন নতুন রাজনৈতিক যাত্রা। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জিয়া পরিষদ, যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর জীবদ্দশায় সংগঠনটির বয়স দাঁড়ায় ৩৮ বছরে।
তিনি ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, এক-এগারোর সেনাসমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজপথে অসীম সাহস প্রদর্শনের মাধ্যমে তিনি মাগুরার মানুষ ও জিয়া পরিষদের নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে স্থায়ী শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসন করে নিয়েছেন।
দীর্ঘ প্রায় ৪২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করেন নানা গুরুত্বপূর্ণ পদ—
জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক
মাগুরা জেলা বিএনপির সফল সভাপতি
সর্বশেষ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষা ও মানবকল্যাণে তাঁর অবদান ছিল প্রশংসনীয়। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন—
মাগুরা বি.এড কলেজ
মাগুরা ল কলেজ
একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়
গরিব ও দুস্থ মানুষের কল্যাণে কবির মুরাদ কল্যাণ ট্রাস্ট
লেখক হিসেবে তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— “ফারাক্কা বাংলাদেশ” এবং “আমার দেখা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া”। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে “স্বনির্ভর বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
আজ তাঁর অনুপস্থিতি আমাদের জন্য এক অপূরণীয় শূন্যতা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি একজন চিন্তাশীল রাজনীতিক, মানবিক সমাজনেতা ও দেশপ্রেমিক মানুষের জীবন ও কর্মকে।
আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া—তিনি যেন জনাব কবির মুরাদ সাহেবকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন। আমিন।