বিজয় মাসে শ্রদ্ধাঞ্জলি
মাগুরার কৃতি সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেন
ডেস্ক রিপোর্ট :
ডিসেম্বর এলেই বাঙালি জাতির হৃদয়ে ফিরে আসে গৌরব, শোক ও আত্মত্যাগের স্মৃতি। মহান বিজয় দিবস—১৬ ডিসেম্বর এবং বিজয় মাসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে জাতি মাগুরার কৃতি সন্তান, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ সিরাজুদ্দীন হোসেনকে।
১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণকারী সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক-এর সিনিয়র সাংবাদিক এবং বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জনক। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে তিনি কলমকে অস্ত্র বানিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অবিচার ও রাজনৈতিক ভণ্ডামির মুখোশ উন্মোচন করেন।
১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ বেতারে প্রচারের দাবিতে সাহসী ভূমিকা রাখেন তিনি। সে সময় কোনো রাজনৈতিক নেতাকে টেলিফোনে না পাওয়ায়, সাংবাদিকতার প্রচলিত রীতি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের নামে বিবৃতি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন ইত্তেফাক-এ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—এই সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বেতারে প্রচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা স্বাধীনতার পথে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে।
অপারেশন সার্চলাইটের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ইত্তেফাক কার্যালয়ে গোলাবর্ষণ করলে পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে মে মাসে পুনরায় প্রকাশ শুরু হলে মানিক মিয়ার সহধর্মিণী মাজেদা বেগমের অনুরোধে সিরাজুদ্দীন হোসেন আবারও ইত্তেফাক-এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং স্বাধীনতার পক্ষে লেখালেখি অব্যাহত রাখেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ‘ঠগ বাছিতে গাঁ উজাড়’ শীর্ষক উপ-সম্পাদকীয়তে স্পষ্ট ভাষায় পাকিস্তানি শাসকদের দ্বিচারিতা তুলে ধরেন। এর জবাবে জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত দৈনিক সংগ্রাম-এ প্রকাশিত লেখার মাধ্যমে তাকে পরোক্ষভাবে হুমকি দেওয়া হলেও তিনি কলম থামাননি।
একাত্তরে তিনি প্রবাসী সরকারের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের আমেরিকান কনস্যুলেটের গোপন প্রতিবেদন পৌঁছে দেন, যা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিজয়ের মাত্র ছয় দিন আগে, ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর, ঢাকার শান্তিনগর চামেলীবাগে অবস্থিত তার ভাড়া বাসা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী ও আলবদর সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে অজ্ঞাত স্থানে গণকবরে দাফন করা হয়। আজও তার মরদেহের সন্ধান মেলেনি।
বিজয় মাস ও মহান বিজয় দিবসে শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেনের আত্মত্যাগ জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা শুধু যুদ্ধের ফসল নয়, এটি সত্যনিষ্ঠ কলম ও আপসহীন চেতনারও বিজয়।
বিজয় মাসে এই বীর সাংবাদিকের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।