নির্বাচন ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর নিলেন সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল
মাগুরা প্রতিনিধি:
মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী সালিমুল হক কামাল নির্বাচন ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবনের বাকি সময় পরিবার নিয়ে শান্তিতে কাটাতে চান।
২৬ শে ডিসেম্বর, শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক দীর্ঘ ও আবেগঘন স্ট্যাটাসে তিনি এ ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, ত্যাগী নেতাকর্মীদের কষ্ট এবং দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে হতাশার কথা তুলে ধরেন।
স্ট্যাটাসে কাজী সালিমুল হক কামাল উল্লেখ করেন, ২০০৮ সালের পর থেকে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। ২০১৭ সালে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ সাত বছর কারাবাস করেন তিনি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অসুস্থ অবস্থায় ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
মুক্তির সময় নেতাকর্মীদের আবেগ, ভালোবাসা ও চোখের পানি তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয় বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন তিনি। দীর্ঘদিন পর মাগুরায় ফিরে মোহাম্মদপুর, আড়পাড়া, সিংড়া ও শত্রুজিৎপুরে আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশ নেন তিনি। এসব সংবর্ধনায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের দীর্ঘ ১৬ বছরের জমে থাকা বেদনা ও ক্ষোভ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে বলে জানান তিনি।
কাজী সালিমুল হক কামাল তার লেখায় বলেন, গত ১৬ থেকে ১৭ বছর ধরে মাগুরার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা, জেল ও নির্যাতনের শিকার হয়েও বিএনপির রাজনীতি ধরে রেখেছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সেই ত্যাগী নেতাকর্মীদের মতামতের কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি।
তিনি অভিযোগ করেন, মাগুরা-২ আসনে আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ব্যাপক আপত্তি ও লিখিত প্রতিবাদ উপেক্ষা করা হয়েছে। ৫১৩ জন দায়িত্বশীল নেতার মধ্যে ৫০১ জন, ১৯টি ইউনিয়নের ১৮ জন সাবেক চেয়ারম্যান এবং দুই জন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিতভাবে বিরোধিতা করলেও দলীয় হাইকমান্ড সে বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়, ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের পুনর্বাসন দলের আদর্শিক ভিতকে দুর্বল করছে। এতে ভবিষ্যতে দলের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভোট বিভক্তির আশঙ্কাও করেছিলেন তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী। বিশেষ করে ভবিষ্যতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে দলের অবস্থান দুর্বল হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, তিনি সবসময় দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে তৃণমূলের কথা শোনার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি তাকে বাদ দিয়ে অন্য যেকোনো যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও তৃণমূল মেনে নেবে বলেও তিনি দলকে জানিয়েছিলেন।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপের মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও বর্তমান দলীয় অবস্থান ও একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
দীর্ঘ কারাবাসে তার পরিবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবারের একান্ত অনুরোধেই তিনি নির্বাচন ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
স্ট্যাটাসের শেষাংশে তিনি ত্যাগী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তরুণদের সামনে রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। কোনো ভুল সিদ্ধান্তে যেন নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘তৃণমূলই দলের প্রাণ। কর্মীদের চোখের পানি কখনো দলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না।’ একই সঙ্গে তিনি দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বলেন, “তৃণমূল জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জিন্দাবাদ।”