, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :

চট্টগ্রামে বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা ‘জশনে জুলুস’ অনুষ্ঠিত

  • প্রকাশের সময় : ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৪ পড়া হয়েছে

 

চট্টগ্রামে বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা ‘জশনে জুলুস’ অনুষ্ঠিত

 

বিশেষ প্রতিনিধি

 

চট্টগ্রাম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা ‘জশনে জুলুস’ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার সকাল থেকেই নগরীর সর্বত্র হামদ, নাত, তাকবির, দরুদ শরীফ ও জিকির ধ্বনিতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ সমবেত হন মুরাদপুর জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে।

শোভাযাত্রার দৃশ্য

সকাল থেকে নগরীর নানা বয়সী মানুষ শোলাশহর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সমাগম এক লাখেরও বেশি ছাড়িয়ে যায়। সকাল ৯টায় মাদ্রাসার সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, শোলাশহর গেট নং ২, জিইসি মোড় প্রদক্ষিণ করে একই পথে পুনরায় মাদ্রাসা মাঠে ফিরে আসে। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মাহফিল, জোহরের নামাজ এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া।

শোভাযাত্রার সময় নগরীর আকাশ-বাতাস মুখরিত হয় “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর”, “নারায়ে রেসালাত, বা রাসূলাল্লাহ (সা.)”সহ হামদ, নাত-এ-রাসূল ও দরুদ শরীফের কলরবে।

দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা

১৯৭৪ সাল থেকে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল চট্টগ্রামে এই জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারেরটি ছিল ৫৪তম আয়োজন।

৫৪তম শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন সৈয়দ মোহাম্মদ সাবের শাহ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রিন্স সৈয়দ মোহাম্মদ কাসিম শাহ ও সৈয়দ মোহাম্মদ মাহমুদ আহমেদ শাহ। আয়োজক সংগঠন জানায়, আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) ১৯৭৪ সালে এ শোভাযাত্রার সূচনা করেন। এরপর থেকে প্রতি বছরই এটি আয়োজন করে আসছে আনজুমান ট্রাস্ট।

অংশগ্রহণ ও আয়োজন

শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোর থেকেই হাজারো মানুষ হেঁটে কিংবা ট্রাক ও পিকআপে করে মাদ্রাসা মাঠে আসেন। পথে পথে নানা মোড়ে পানি, শরবত ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি রাস্তাজুড়ে শোভা পায় পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

শোভাযাত্রাকে ঘিরে নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। গোয়েন্দা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশ জানায়, শোভাযাত্রার সময় যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। ছুটির দিন হওয়ায় যানজটও ছিল স্বাভাবিক। তবে নিরাপত্তার কারণে এবারের শোভাযাত্রা কিছুটা সীমিত আকারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত রুট

প্রতিবছর শোভাযাত্রা মাদ্রাসা মাঠ থেকে শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, কাটালগঞ্জ, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা, জিইসি, গেট নং ২ হয়ে বিকেলে মাঠে শেষ হতো। তবে এ বছর শোভাযাত্রা শোলাশহর থেকে মুরাদপুর, গেট নং ২ ও জিইসি মোড় প্রদক্ষিণ শেষে একই পথে ফিরে আসে।

আনজুমান ট্রাস্টের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মোসাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, “পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর শোভাযাত্রার রুট কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের অনুরোধে আমরা শোভাযাত্রা জিইসি মোড় পর্যন্ত নিয়েছি। তবে রুট ছোট হলেও পরিবেশ ও আবহ কমেনি।”

আনজুমান ট্রাস্টের মহাসচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ বছর রাসূল (সা.) এর আগমন উপলক্ষে ১৫০০তম বর্ষপূর্তি। একইসঙ্গে আনজুমান ট্রাস্ট তার শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিত এই জশনে জুলুস এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা ‘জশনে জুলুস’ অনুষ্ঠিত

প্রকাশের সময় : ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

চট্টগ্রামে বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা ‘জশনে জুলুস’ অনুষ্ঠিত

 

বিশেষ প্রতিনিধি

 

চট্টগ্রাম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা ‘জশনে জুলুস’ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার সকাল থেকেই নগরীর সর্বত্র হামদ, নাত, তাকবির, দরুদ শরীফ ও জিকির ধ্বনিতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো মানুষ সমবেত হন মুরাদপুর জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে।

শোভাযাত্রার দৃশ্য

সকাল থেকে নগরীর নানা বয়সী মানুষ শোলাশহর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সমাগম এক লাখেরও বেশি ছাড়িয়ে যায়। সকাল ৯টায় মাদ্রাসার সংলগ্ন আলমগীর খানকাহ থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, শোলাশহর গেট নং ২, জিইসি মোড় প্রদক্ষিণ করে একই পথে পুনরায় মাদ্রাসা মাঠে ফিরে আসে। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় মাহফিল, জোহরের নামাজ এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ দোয়া।

শোভাযাত্রার সময় নগরীর আকাশ-বাতাস মুখরিত হয় “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর”, “নারায়ে রেসালাত, বা রাসূলাল্লাহ (সা.)”সহ হামদ, নাত-এ-রাসূল ও দরুদ শরীফের কলরবে।

দীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা

১৯৭৪ সাল থেকে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল চট্টগ্রামে এই জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারেরটি ছিল ৫৪তম আয়োজন।

৫৪তম শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন সৈয়দ মোহাম্মদ সাবের শাহ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রিন্স সৈয়দ মোহাম্মদ কাসিম শাহ ও সৈয়দ মোহাম্মদ মাহমুদ আহমেদ শাহ। আয়োজক সংগঠন জানায়, আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) ১৯৭৪ সালে এ শোভাযাত্রার সূচনা করেন। এরপর থেকে প্রতি বছরই এটি আয়োজন করে আসছে আনজুমান ট্রাস্ট।

অংশগ্রহণ ও আয়োজন

শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোর থেকেই হাজারো মানুষ হেঁটে কিংবা ট্রাক ও পিকআপে করে মাদ্রাসা মাঠে আসেন। পথে পথে নানা মোড়ে পানি, শরবত ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি রাস্তাজুড়ে শোভা পায় পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

শোভাযাত্রাকে ঘিরে নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। গোয়েন্দা সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশ জানায়, শোভাযাত্রার সময় যানবাহনকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। ছুটির দিন হওয়ায় যানজটও ছিল স্বাভাবিক। তবে নিরাপত্তার কারণে এবারের শোভাযাত্রা কিছুটা সীমিত আকারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত রুট

প্রতিবছর শোভাযাত্রা মাদ্রাসা মাঠ থেকে শুরু হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, কাটালগঞ্জ, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, ওয়াসা, জিইসি, গেট নং ২ হয়ে বিকেলে মাঠে শেষ হতো। তবে এ বছর শোভাযাত্রা শোলাশহর থেকে মুরাদপুর, গেট নং ২ ও জিইসি মোড় প্রদক্ষিণ শেষে একই পথে ফিরে আসে।

আনজুমান ট্রাস্টের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মোসাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, “পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর শোভাযাত্রার রুট কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের অনুরোধে আমরা শোভাযাত্রা জিইসি মোড় পর্যন্ত নিয়েছি। তবে রুট ছোট হলেও পরিবেশ ও আবহ কমেনি।”

আনজুমান ট্রাস্টের মহাসচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ বছর রাসূল (সা.) এর আগমন উপলক্ষে ১৫০০তম বর্ষপূর্তি। একইসঙ্গে আনজুমান ট্রাস্ট তার শতবর্ষে পদার্পণ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মিলাদ শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিত এই জশনে জুলুস এখন চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”